⭕বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ
⭕বিবাহে কোষ্ঠিবিচার কতটুকু যৌক্তিক❓
বৈদিক প্রথায় পিতা-মাতা বিবাহের পূর্বে পাত্র এবং পাত্রীর কোষ্ঠি বিচার করেন। জ্যোতির্গণনায় পাত্র এবং পাত্রী যদি সর্বোতভাবে সুসঙ্গত হয়, তা হলে সেই সংযোগকে বলা হয় যোটক এবং তখন তাদের বিবাহ হয়।
এমন কি পঞ্চাশ/একশো বছর আগেও হিন্দুসমাজে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। পাত্র যতই ধনী হোক না কেন অথবা কন্যা যতই সুন্দরী হোক না কেন, জ্যোতির্গণনায় মিল না হলে বিবাহ হত না। তিনটি শ্রেণীতে মানুষের জন্ম হয় — দেবগণ, মনুষ্যগণ এবং রাক্ষসগণ।
ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন ভাগে দেবতা এবং রাক্ষসেরা রয়েছে। মানব সমাজেও কোন কোন মানুষ দেবতাদের মতো এবং কোন কোন মানুষ আবার রাক্ষসের মতো। জ্যোতির্গণনাতেও তেমন দেবগণের সঙ্গে রাক্ষসগণের মিল না হওয়ায় তাদের মধ্যে বিবাহ হয় না।
তেমনই প্রতিলোম(উচ্চ গুণসম্পন্ন/বর্ণের কন্যার সহিত নিম্ন গুণসম্পন্ন/বর্ণের পাত্রের বিবাহ) এবং অনুলোমের(উচ্চ গুণসম্পন্ন/বর্ণের পাত্রের সহিত নিম্ন গুণসম্পন্ন/বর্ণের কন্যার বিবাহ) বিচার রয়েছে।
মূল কথা হচ্ছে, পাত্র এবং পাত্রী যদি সমান স্তরের হয় তা হলে বিবাহ সুখের হয়, কিন্তু বৈষম্য হলে তা চরমে দুঃখদায়ক হয়। যেহেতু আজকাল আর সেইভাবে বিচার বিবেচনা করা হয় না, তাই এত বিবাহ-বিচ্ছেদ হচ্ছে।
বস্তুতপক্ষে, আজকাল বিবাহ-বিচ্ছেদ একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও পূর্বে পতি-পত্নীর সম্পর্ক ছিল সারা জীবনের সম্পর্ক, এবং এই সম্পর্ক এতই প্রীতির ছিল যে, পতির মৃত্যু হলে পত্নী স্বেচ্ছায় সহমৃতা হতেন অথবা আজীবন পতির অনুগত থেকে বৈধব্যদশা বরণ করতেন।
আজকাল আর তা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ মানব-সমাজ পশু-সমাজের স্তরে অধঃপতিত হয়েছে। এখন কেবল পরস্পরের প্রতি অভিরুচির ফলে বিবাহ হচ্ছে। দাম্পত্যেহভিরুচির্হেতুঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ১২/২/৩)। অভিরুচির অর্থ হচ্ছে ‘সম্মতি’। পুরুষ এবং স্ত্রী যদি কেবল বিবাহ করতে সম্মত হয়, তা হলেই বিবাহ হতে পারে।
কিন্তু বৈদিক প্রথা যদি নিষ্ঠা সহকারে পালন না করা হয়, তা হলে প্রায়ই সেই বিবাহের সমাপ্তি হয় বিবাহ-বিচ্ছেদে।
©️শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, ভা: ৯/১৮/২৩