সাধারণত বিবাহিত স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। স্ত্রীরও পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। সনাতন ধর্মে অবৈধ সম্পর্কের কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। আসুন এ সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্র হতে সনাতন ধর্মে শাস্তির বিধান গুলো দেখি।
অবৈধ-সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( মহাভারত, অনুশাসন পর্ব ১০৪।২১,২২)-এ বলা হয়েছে-
ন হীদৃশমনাযুষ্যং লোকে কিংচন বিদ্যতে।
যাদৃশং পুরুষস্যেহ পরদারোপসেবনম্।।
যাবন্তো রোমকুপাঃ স্যুঃ স্ত্রীণাং গত্রেষু নির্মিতাঃ।
তাবদ্ বর্ষসহস্ত্রাণি নরকং পর্যুপাসতে।।
বঙ্গানুবাদ:
পরস্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে মানুষের আয়ু খুব শিগ্রই শেষ হয়ে যায়। এই পৃথিবীতে পরস্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের ফলে যে আয়ু নষ্ট হয় এর সমান পুরুষের আয়ু নষ্ট করার দ্বিতীয় আর কোনো কার্য নেই। ( মৃত্যুর পরে ) সেই ব্যভিচারি স্ত্রীর শরীরে যত রোমকুপ থাকে, ঠিক তত হাজার বছর সেই ব্যভিচারি পুরুষকে নরকে থাকতে হয়।
অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি সম্পর্কে (গরুড়পুরাণ, উত্তরখণ্ড ৫।৪)-এ বলা হয়েছে-
স্ত্রীঘাতো গর্ভপাতী চ পুলিন্দো রোগবান্ ভবেন্।
অগম্যাগমনাত্ষণ্ঢ়ো দুশ্চর্মা গুরুতল্পগঃ।।
বঙ্গানুবাদ:
যে ব্যক্তি স্ত্রীকে হত্যা এবং গর্ভপাত বা গর্ভের বাচ্চা-নষ্ট করে ঐ পাপী পরবর্তী জন্মে নিম্নযোনীতে জন্মগ্রহণ করে। অগম্যাগমন করলে ( অর্থাৎ যে স্ত্রী বা নারীর সাথে সম্ভগ নিষিদ্ধ, তার সাথে যদি কেউ অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় ) সেই পাপী পরবর্তী জন্মে নপুংসক হয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে এবং যে পাপী গুরুপর্ত্নী গমন করে সে পরবর্তী জন্মে কুষ্ঠ বা চর্ম রোগে পীড়িত হতে থাকে।
অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি সম্পর্কে ( শিবপুরাণ, উমাসংহিতা ১৬।১২ )-এ বলা হয়েছে-
অগম্যাগামী যশ্চান্তে যাতি সপ্তবলং দ্বীজ।
বঙ্গানুবাদ:
যে অধম পাপী অগম্যাগামী স্ত্রীর ( অর্থাৎ যে স্ত্রী বা নারীর সাথে সম্ভগ নিষিদ্ধ, তার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় ) সেই পাপী, মৃত্যুর পরে সপ্তবল নামক নরকে নিমজ্জিত হবে।
অবৈধ-সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( শ্রীমদ্ভাগবত ৫।২৬।২০ )-এ বলা হয়েছে-
যত্ত্বিহ বা অগম্যাং স্ত্রিয়মগম্যং বা পুরুষং যোষিদভিগচ্ছতি তাবমুত্র কশয়া তাড়য়ন্তস্তিন্ময়া সূর্য্যা লোহময্যা পুরুষমালিঙ্গয়ন্তি স্ত্রিয়ং চ পুরুষরূপয়া সূর্য্যা ॥
বঙ্গানুবাদ: যে ব্যক্তি অগম্যা স্ত্রীতে এবং যে স্ত্রী অগম্য পুরুষে অভিগমন ( তথা অবৈধ সঙ্গ ) করে, পরলোকে যমদূতেরা তাদের তপ্তসূর্মি নামক নরকে নিয়ে গিয়ে চাবুক দিয়ে প্রহার করে এবং তারপর পুরুষকে তপ্ত লৌহময় স্ত্রীমূর্তি ও স্ত্রীকে সেই প্রকার পুরুষ-মূর্তির দ্বারা আলিঙ্গন করায়। এটিই অবৈধ যৌন সঙ্গের দণ্ড।
শ্রীল এ,সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকৃত তাৎপর্য:
সাধারণত বিবাহিতা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। বৈদিক বিধান অনুসারে, অপরের স্ত্রীকে মাতৃবৎ দর্শন করা উচিত, এবং মাতা, ভগিনী ও কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেউ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে তা মায়ের সঙ্গে যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়ার মতো বলে বিবেচনা করা হয়। সেই আচরণ অত্যন্ত পাপময়। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম বলবৎ রয়েছে, কোন স্ত্রী যদি তার পতি ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে সেই সম্পর্ক পিতা অথবা পুত্রের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মতো। অবৈধ যৌন সম্পর্ক সর্বদাই নিষিদ্ধ হয়েছে, এবং যে পুরুষ অথবা স্ত্রী সেই সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তাকে এই শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে দণ্ডভোগ করতে হবে।
অবৈধ সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( বিষ্ণুপুরাণ ৩।১১।১২৫ )-এ বলা হয়েছে-
পরদারান্ন গচ্ছেচ্চ মনসাপি কথঞ্চন ।
কিমু বাচাঙ্গিবন্ধোঽপি নাস্তি তেষু ব্যবায়িনাম্।।
বঙ্গানুবাদ: পরস্ত্রীর সঙ্গে তো বাক্যেই নয়, মনে মনেও (অবৈধ যৌন) সঙ্গের অভিলাষ করবে না, কারণ তাতে মৈথুনকারীর অস্থিবন্ধনও হয় না (অর্থাৎ তাকে পরের জন্মে অস্থি-শূন্য কীট জন্ম নিতে হয়)।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন শাস্ত্রে অবৈধ সঙ্গের কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই আমাদের কখনো অবৈধ-সঙ্গ করা তো দূরের কথা, চিন্তাও করা উচিত নয়।
।।হরে কৃষ্ণ।।
[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ]
নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °