স্বর্গ কি? স্বর্গ সম্পর্কে আলোচনা করুন। কেন মুক্তিকামী ব্যক্তি স্বর্গলোক কামনা করে না ???

IMG-20250213-WA0002

আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে, স্বর্গ ও নরক নামে নাকি কোন কিছু নেই।তাদের কথা শুনলে আমাদের হাসি পায়।কারন সনাতনী সমগ্র শাস্ত্রে স্বর্গ এবং নরক সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

স্বর্গঃ স্বর্গ হল জীবের পুন্যফলে লভ্য চতুর্দশ ভুবনের মধ্যে একটি সুখময় স্থান। বেদ(শ্রুতি),স্মৃতি,ইতিহাস(মহাভারত, রামায়ন) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা , অষ্টাদশ পুরাণ, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি  বিভিন্ন শাস্ত্রে স্বর্গের বর্ণনা পাওয়া যায়।শ্রীমদ্ভাগবত ৫/২৬/৩৮ নং শ্লোকে চতুর্দশ ভূবন বিশিষ্ট এই ব্রহ্মান্ডের কথা আলোচনা করা হয়েছে। অথাৎ আমাদের এই ব্রহ্মান্ডে রয়েছে ৭ টি উদ্ধলোক ও ৭ টি অধঃলোক। ব্রহ্মান্ডের ৭ টি উদ্ধলোক সমূহ হল – ভূলোক( পৃথিবী),ভূবলোক, স্বর্গলোক(ইন্দ্রলোক), মহলোক, জনলোক, তপলোক এবং সত্যলোক(ব্রহ্মলোক)। এবং ৭ টি অধলোক হল -অতল,বিতল,সুতল,তলাতল, রসাতল, মহাতল এবং পাতাল।

       “এতাবানেবান্ডকোশো যশ্চতুর্দশধা
             পুরাণেষু বিকল্পিত উপগীয়তে”

                – (শ্রীমদ্ভাগবত ৫/২৬/৩৮)

ঋগ্বেদের ৩/৬২/১০ মন্ত্রে এ ব্রহ্মান্ডের উদ্ধলোকের তিনটি লোকের মধ্যে স্বর্গলোকের বিবরন পাওয়া যায়।

           “ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং
                    ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
               ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।”

-ঋগ্বেদ ৩/৬২/১০

অনুবাদঃ “যিনি ভুলোক,ভুবলোক এবং স্বর্গলোক এই ত্রিলোকের স্রষ্টা,অথাৎ সমস্ত বিশ্বলোকের প্রসবিতা, সেই সচ্চিদানন্দঘন পরমব্রহ্মের বরনীয় জ্যোতিকে আমরা ধ্যান করি।তিনি আমাদের মন ও বুদ্ধিকে শুভ কার্যে প্রেরনা প্রদান করুন।”

   এছাড়াও বেদের বহু মন্ত্রে স্বর্গলোকের বর্ণনাপাওয়া যায়।ভগবদগীতা ২/২ নং শ্লোকে পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে স্বর্গলোক বা ইন্দ্রলোক সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করেন।

কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম্।
      অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরমর্জুন।।”

-(ভগবদগীতা ২/২,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

অনুবাদঃ”প্রিয় অর্জুন, এই ঘোর সঙ্কটময় যুদ্ধস্থলে যারা জীবনের প্রকুত মূল্য বোঝে না, সেই সব অনার্যের মতো শোকানল তোমার হৃদয়ে কিভাবে প্রজ্বলিত হল? এই ধরনের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নীত করবে না, পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট করবে।”

“ত্রৈবিদ্যা মাং সোমপাঃ পূতপাপা
 যজ্ঞৈরিষ্ট্বা স্বর্গতিং প্রার্থয়ন্তে।

 তে পুন্যমাসাদ্য সুরেন্দ্রলোকম্
           অশ্নন্তি দিব্যান্ দিবি দেবভোগান্।।”

(গীতা ৯/২০,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)
অনুবাদঃ “ত্রিবেদজ্ঞগণ যজ্ঞানুষ্ঠান দ্বারা আমাকে আরাধনা করে যজ্ঞাবশিষ্ট সোমরস পান করে পাপমুক্ত হন এবং স্বর্গে গমন প্রার্থনা করেন। তাঁরা পুণ্যকর্মের ফলস্বরূপ ইন্দ্রলোক লাভ করে দেবভোগ্য দিব্য স্বর্গসুখ উপভোগ করেন।”

             “তে তং ভুক্ত্বা স্বর্গলোকং বিশালং
              ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্যলোকং বিশন্তি।
                   এবং ত্রয়ীধর্মমনুপ্রপন্না
             গতাগতং কামকামা লভন্তে।।”

               (গীতা ৯/২১,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

অনুবাদঃ “তাঁরা সেই বিপুল স্বর্গসুখ উপভোগ করে পুণ্য ক্ষয় হলে মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন। এভাবেই ত্রিবেদোক্ত ধর্মের অনুষ্ঠান করে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষী মানুষেরা সংসারে কেবলমাত্র বারংবার জন্ম-মৃত্যু লাভ করে থাকেন।”

  উপরোক্ত আলোচনায় এভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় স্বর্গলোকের বর্ণনা প্রদান করেন,এবং সাথে সাথে স্বর্গকামীগনের অভিলাষিত স্বর্গলোকে গমন করার জন্য অনুৎসাহী করে  গীতা  ৭/৫ এবং গীতা ১৫/৬ নং শ্লোকে স্পষ্টভাবে তার স্বীয় ধাম  চিন্ময় পরা প্রকৃতি গোলক বৃন্দাবন ও বৈকুন্ঠ ধামে ফিরে যাওয়ার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেন,যেখানে গেলে আর কখনো আমাদের এই অপরা প্রকৃতি বা জড় জগতে ফিরে আসতে হবে না।

“অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধিমে পরাম্।
জীবভূতাং মহাবাহো যয়েদং ধার্যতে জগৎ।।”

-(গীতা ৭/৫ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

অনুবাদঃ “হে মহাবাহো! এই অপরা প্রকৃতি ( জড় জগৎ) ব্যতীত আমার আর একটি পরা প্রকৃতি(চিন্ময় জগৎ) রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য-স্বরূপা ও জীবভূতা; সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জগৎকে ধারণ করে আছে।”

” ন তদ্ ভাসয়তে সূর্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ।
        যদ্ গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম।।”

            -(গীতা ১৫/৬ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

অনুবাদঃ ” সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি বা বিদ্যুৎ আমার সেই পরম ধামকে আলোকিত করতে পারে না। সেখানে গেলে আর জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।”

হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।
নিবেদন-স্বধর্মম্ : Connect to the inner self.

Avatar of Sadgun Madhav Dash

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest


0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments