অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে,
ভগবানের প্রসাদ ক্রয়-বিক্রয় করা কি শাস্ত্রীয়?
মন্দিরে কেন প্রসাদ বিক্রি করে?
প্রসাদকে কি আর্থিক মূল্যের মাপকাঠিতে মাপা যায়?
শাস্ত্রে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমরা যেন সর্বদা ভগবানের প্রসাদ গ্রহণ করি। ভগবানের প্রিয় ব্যঞ্জন সামগ্রি নিবেদন পূর্বক আমরা ভগবানের কৃপাপ্রসাদম লাভ করি।
সলিলৈঃ শুচিভির্মাল্যৈর্বন্যৈর্মূলফলাদিভিঃ।
শস্তাঙ্কুরাংশুকৈশ্চার্চেত্তুলস্যা প্রিয়য়া প্রভুম্।
[ শ্রীমদ্ভাগবতম ৪.৮.৫৫ ]
অনুবাদঃ
শুদ্ধ জল,শুদ্ধ ফুলমালা, ফল,ফুল,এবং শাক সবজির দ্বারা,যা বনে পাওয়া যায়, অথবা নবীন দূর্বাঘাস,পুষ্পের কলি,এমনকি গাছের বাকল দিয়ে ভগবানের পূজা করা উচিৎ, আর যদি সম্ভব হয়,তাহলে তুলসীপত্র নিবেদন করা উচিৎ, যা পরমেশ্বর ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়।।
ভগবানের সেবাকে দু’ভাবে ব্যাখা করা যায় – Pre-paid ও Post-paid। Pre-paid সেবায় আমরা ভগবানের জন্য বাজার করে, রন্ধন করে, ব্রাহ্মণকে যথাযোগ্য দক্ষিণা প্রদানের মাধ্যমে ভগবানের ভোগসেবার পুণ্য লাভ করি। অর্থাৎ ভক্তরা আগে থেকে ভগবানের সেবার জন্য ডোনেশান করে এবং ভগবানের সেবার পর সে প্রসাদ ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে, মহাপ্রসাদ ক্রয় post-paid সেবার মতো। অর্থাৎ ভগবানের সেবকগণই বাজার করে, রন্ধন করে, ভগবানকে ভোগ লাগাবেন। এতে যা খরচ হলো তা হিসেব করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবেন, ভক্তেরা তা ক্রয় করার মাধ্যমে ভগবানকে ভোগ লাগানোর পুণ্য অর্জন করবেন। এভাবে দিব্য বস্তু ক্রয় দ্বারাও পুণ্য লাভ করা যায়।
অনেকেই আছেন, যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় মন্দির/প্রসাদী রেস্টুরেন্টগুলো থেকে প্রসাদ পেতে হয়। অনেকে আছেন পরিবারে ভক্তির অনুকূল পরিবেশ নেই, তাদেরও মন্দির/প্রসাদী রেস্টুরেন্টে নিয়মিত প্রসাদ পেতে হয়। অথবা মন্দিরে ভগবানের দর্শনের জন্য গেলেও অনেক সময় আমরা প্রসাদ ক্রয় করে পরিবারের জন্য নিয়ে আসি। বস্তুত সদাচার হলো মন্দিরে ভগবানের দর্শনের সময় ভগবানের জন্য কিছু না কিছু উপহার নিয়ে যাওয়া বা মন্দিরে দান করা এবং ভগবানের পক্ষ হতে প্রসাদ গ্রহণ করা। এটি হলো ভক্ত-ভগবনের প্রীতির আদান প্রদান। আবার প্রসাদী রেষ্টুরেন্টগুলোতে নির্দিষ্ট প্রণামী দিয়ে আমরা প্রসাদ সংগ্রহ করি, জে প্রণামী আবার পরের দিনে ভগবানের ভোগ প্রস্তুতে ব্যয় করা হয়।
যদি আমরা শাস্ত্রের দিকে তাকাই , তবে আমরা পাই শ্রীস্কন্দপুরাণে স্পষ্টভাবে মহাপ্রসাদ ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমোদন আছে-
বিক্রয়শ্চ ত্রুয়ো বাপি প্রশস্তস্তস্য ভো দ্বিজা।
নির্ম্মাল্যং জগদীশস্য নাশিত্বাশ্নামি কিঞ্চন।।
[স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ডে-পুরুষোত্তমমাহাত্ম্যম, ৩৮।১৫]
অনুবাদ:
জৈনিমি ঋষি বললেন, “হে দ্বিজগণ! মহাপ্রসাদের ক্রয়-বিক্রয় প্রশস্ত জানিবেন। জগদীশ্বর জগন্নাথদেবের প্রসাদ ছাড়া কদাচিত অন্য কিছু ভোজন করিবে না।”
শ্রীজগন্নাথপুরী ধাম, শ্রী তিরুপতি বালাজী মন্দির সহ প্রায় সমস্ত প্রসিদ্ধ মন্দিরে তাই মহাপ্রসাদ ক্রয়-বিক্রয় হয়। মন্দিরের নিত্যদিনের সেবাপূজা এবং ভক্তদের প্রসাদ সুনিশ্চিত করণের জন্য ভগবান তার প্রসাদ ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছেন।
নিবেদক-
ব্রজসখা দাস
Join with us: