ব্রহ্মাঃ
ব্রহ্মা হলেন চিন্ময় জগতের গোলকধামে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ এবং জড় জগতে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের স্বপ্রকাশ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভীপদ্ম হতে আবির্ভূত এক মহাতপস্বী এবং গুরু।তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে জড় জগতের অসংখ্য জীবের জড়দেহ সৃষ্টি করেন।তাঁকে রজোগুণের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাও বলা হয়।
১/চিন্ময় জগতে ব্রহ্মার আবির্ভাবঃ
চিন্ময় জগতের গোলক ধামে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নাভীপদ্ম থেকে ব্রহ্মার আবির্ভাব। এ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
আবির্ব্বভূব তৎপশ্চাৎ কৃষ্ণস্য নাভিপঙ্কজাৎ।
মহাতপস্বী বৃদ্ধশ্চ কমণ্ডলুধরো বরঃ ॥ ৩০
শুক্লবাসাঃ শুক্লদন্তঃ শুক্লকেশশ্চতুর্ভুজঃ।
যোগীশং শিল্পিনামীশং সর্ব্বেষাং জনকো গুরুঃ।৩১
তপসাং ফলদাতা চ প্রদাতা সর্ব্বসম্পদাম্।
স্রষ্টা বিধাতা কর্তা চ হর্তা চ সর্ব্বকৰ্ম্মণঃ ॥ ৩২
ধাতা চতুর্থাং বেদানাং জ্ঞাতা বেদপ্রসূঃ পতিঃ।
শান্তঃ সরস্বতীকান্তঃ সুশীলশ কৃপানিধিঃ ॥ ৩৩ শ্রীকৃষ্ণপুরতঃ স্থিত্বা তুষ্টাব তং পুটাঞ্জলিঃ। পুলকাঙ্কিতসর্ব্বাঙ্গো ভক্তিনম্রাত্মকন্ধরঃ ॥ ৩৪
-(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/৩০-৩৪)
অনুবাদঃ তারপর পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের নাভিকমল হতে মহাতপস্বী, কমণ্ডলু-হস্ত বৃদ্ধ ব্রহ্মা আবির্ভূত হলেন। সেই যোগীও শিল্পীগণের ঈশ্বর,চতুর্মুখ,সকলের জনক এবং গুরু। তাঁর পরিধান শুক্ল বসন, দন্ত এবং কেশ- কলাপ শুক্লবর্ণ। তিনি সর্ব্বসম্পদ প্রদানকারী , তপস্যার ফলদাতা এবং সমুদয় কর্ম্মের স্রষ্টা,বিধাতা, কর্তা ও হর্তা। এই কৃপানিধি ব্রহ্মা বেদের বিধানকর্তা ও জ্ঞাতা। তিনি শান্ত, সরস্বতীকান্ত,সুশীল এবং কৃপানিধি। ব্রহ্মা সর্বাঙ্গে পুলকাঙ্কিত কৃতাঞ্জলি হয়ে ভক্তিবিনত-মস্তকে সম্মুখে অবস্থানপূর্ব্বক শ্রীকৃষ্ণকে স্তব করতে লাগলেন।
২/জড় জগতে ব্রহ্মার আবির্ভাবঃ
জড় জগতে গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভীপদ্ম থেকে মহাগুরু, মহাতপস্বী ব্রহ্মার আবির্ভাব। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে –
তস্যার্থসূক্ষ্মাভিনিবিষ্টদৃষ্টে-
রন্তর্গতোহর্থো রজসা তনীয়ান।
গুণেন কালানুগতেন বিদ্ধঃ
সৃষ্যংস্তদাভিদ্যত নাভিদেশাৎ ॥ ১৩॥
স পদ্মকোশঃ সহসোদতিষ্ঠৎ
কালেন কর্মপ্রতিবোধনেন।
স্বরোচিষা তৎসলিলং বিশালং
বিদ্যোতয়ন্নক ইবাত্মযোনিঃ ॥ ১৪
তল্লোকপদ্মং স উ এব বিষ্ণুঃ
প্রাবীবিশৎসর্বগুণাবভাসম্ ।
তস্মিন্ স্বয়ং বেদময়ো বিধাতা
স্বয়ম্ভবং যং স্ম বদন্তি সোহভূৎ ॥ ১৫ ॥
তস্যাং স চান্তোরুহকর্ণিকায়া-
মবস্থিতো লোকমপশ্যমানঃ ।
পরিক্রমন ব্যোম্নি বিবৃত্তনেত্র-
শ্চত্বারি লেভেহনুদিশং মুখানি ॥ ১৬ ॥
-(শ্রীমদ্ভাগবত ৩/৮/১৩-১৬)
অনুবাদঃ সৃষ্টির সূক্ষ্ম বিষয়ে ভগবানের মনোযোগ অভিনিবিষ্ট ছিল, যা রজোগুণের দ্বারা ক্ষোভিত হয়, এবং তার ফলে সৃষ্টির সূক্ষ্মরূপ তাঁর নাভিদেশ ভেদ করে উদ্ভুত হয়।১৩।
জীবের সকাম কর্মের এই সমগ্র স্বরূপ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নাভি ভেদ করে একটি পদ্মের কলির মতো আকার ধারণ করল, এবং ভগবানের ইচ্ছায় তা একটি সূর্যের মতো সব কিছুকে উদ্ভাসিত করে বিশাল প্রলয় বারি শুকিয়ে দিল।১৪।
সেই সর্বলোকময় পদ্মফুলে ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং পরমাত্মারূপে প্রবেশ করেন, এবং এইভাবে যখন তা প্রকৃতির সমস্ত গুণের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়, তখন বৈদিক জ্ঞানের মূর্ত বিগ্রহ, যাঁকে স্বয়ম্ভ বলা হয়, তিনি উৎপন্ন হয়েছিলেন।১৫।
ব্রহ্মা পদ্মফুল থেকে আবির্ভূত হন, এবং পদ্মের কর্ণিকায় অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই জগৎকে দর্শন করতে পারলেন না। তাই, তিনি সর্বত্র ভ্রমণ করে চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করলেন, এবং তার ফলে তিনি চারটি মুখ লাভ করলেন।১৬।
হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।
©️ স্বধর্মম্ ™️