ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখা ০৭.৫৬.০৪-০৫, সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদ৩.১৭.৬-৭, কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় নারায়ন উপনিষদ ৪, অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১,১/২৪, কৃষ্ণ উপনিষদ এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরন উপনিষদ ২ ইত্যাদি বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান গোলকপতি শ্রীকৃষ্ণের মহিমা বর্ণিত আছে। অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদে বলা হয়েছে,
“একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”
অর্থাৎ, সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য।
– গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ)
বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। সমগ্র বেদ শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা আলোচিত হয়েছে।এ বিষয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় (১৫/১৫) বলেন,
वेदैश्च सर्वैरहमेव वेद्यो
“বেদৈশ্চ সবৈররহমেব বেদ্যো”
অর্থাৎ, আমি সমগ্র বেদে জ্ঞাতব্য।
শ্রীকৃষ্ণকে বেদে বিষ্ণু, কৃষ্ণ,গোপাল ( চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে তিনি গোচারন করেন, তাই শ্রীকৃষ্ণের এক নাম গোপাল), দেবকীপুত্র ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে।
ঋগ্বেদীয় পুরুষসুক্ত,বিষ্ণু সুক্ত, এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় নারায়ন সুক্তে সমগ্র জগৎব্যাপী বিষ্ণুর বিরাটরূপ বা বিশ্বরূপের বর্ণনা করা হয়েছে,যে বিশ্বরূপটি গীতার বর্ণনা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দর্শন দান করেন (গীতা ১১/৫-৪৪)। এবং একই গীতা শাস্ত্রে অর্জুনের ইচ্ছা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে চতুর্ভূজ বিষ্ণুরুপ প্রদর্শন করেন (গীতা ১১/৪৬,৫০)।তাই মহাভারতে বহুবার শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীবিষ্ণু নামে সম্বোধন করা হয়েছে,
(“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।”
– “ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷”
– মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)।
সে শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণু হলেন স্বয়ং দারুব্রহ্ম জগন্নাথ।দারুব্রহ্ম জগন্নাথ রুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উৎকল বা উড়িষ্যায় সমুদ্রের তীরবর্তী শ্রীক্ষেত্র পুরুষোত্তম ধাম জগন্নাথ পুরীতে নিত্য বিরাজমান।স্কন্দ পুরাণ শাস্ত্রের বিষ্ণু খন্ড,পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,১-২১ তম অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, বিষ্ণুভক্ত ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় স্বয়ং বিষ্ণু দারুরুপে উড়িষ্যার দক্ষিণ সাগরের তটে অবস্থান করেন। পরে ইন্দ্রদ্যুম্ন সেবকগন কতৃর্ক সেই দারুকে মহাবেদীতে স্থাপন করেন।ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় ভগবান বিষ্ণু যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তিনি দারু থেকে জগন্নাথ( শ্রীকৃষ্ণ), বলদেব (বলরাম), সুভদ্রা এবং সুদর্শনরুপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। বেদ শাস্ত্রে সমুদ্রের তীরবর্তী দারুব্রহ্ম জগন্নাথের কথা বর্ণিত আছে।
यद्दारु॒ प्लव॑ते॒ सिन्धो॑: पा॒रे अ॑पूरु॒षम्।
तदा र॑भस्व दुर्हणो॒ तेन॑ गच्छ परस्त॒रम्॥
“যদ্ দারু প্লবতে সিন্ধোঃ পারে অপূরুষম্।
তদা রভস্ব দুর্হণো তেন গচ্ছ পরস্তরম্।।
অনুবাদঃ ঐ দূরদেশে, সমুদ্রের পারে কোন প্রযত্ন ছাড়াই প্রকাশিত অপৌরুষেয় দারু ভাসছে– হে চিরঞ্জীবী স্তুতিকর্তা– তাঁর উপাসনা কর। সেই দারুময় বিগ্রহের উপাসনায় তুমি শ্রেষ্ঠতর দিব্যলোক প্রাপ্ত করবে।
– ঋগ্বেদ সংহিতাঃ ১০/১৫৫/৩
।।জয় জগন্নাথ।।
।।হরে কৃষ্ণ।।
।।প্রনাম।।
– সদগুন মাধব দাস