বেদে শ্রীনৃসিংহ অবতার
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের সপ্তম স্কন্দে নৃসিংহ অবতার এবং ভক্ত প্রহ্লাদের কাহিনী খুব সুন্দরভাবে শ্রীল শুকদেব গোস্বামী রাজা পরীক্ষিৎ মহারাজকে বর্ণনা করেন। এছাড়াও মহাভারত, অগ্নিপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, বায়ুপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ, কূর্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, পদ্মপুরাণ (উত্তরখণ্ড), স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ সহ বিবিধ শাস্ত্রে নৃসিংহ অবতারের কথা বর্নিত আছে।
নৃসিংহদেব হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ/ শ্রীবিষ্ণুর করুণাঘন অবতার। ভক্ত প্রহ্লাদের কাছে তিনি করুণাঘন মূর্তি এবং বিপরীতে দূরাচারীর হিরণ্যকশিপুর কাছে তিনি উগ্র ভয়ংকর মূর্তিতে আবির্ভূত। ভক্ত প্রহ্লাদের কথাকে সত্য করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু তিনি একটি স্পটিক স্তম্ভ থেকে অর্ধেক নর, অর্ধেক সিংহ বা নৃসিংহ অবতাররূপে আবির্ভুত হয়েছিলেন।
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ,পদ্মপুরাণসহ আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ শাস্ত্রেও নৃসিংহ অবতারের কথা বর্ণিত আছে। বেদ প্রধানত চার প্রকার -ঋগ্, যর্জু (শুক্ল, কৃষ্ণ), সাম, অথর্ব। আবার প্রতিটি বেদের চারটি অংশ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ।
বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকে নৃসিংহদেবের নামে একটি নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্র রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে –
বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰায় ধীমহি।
তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ ।।
~ তৈত্তিরীয় আরণ্যক, দশম প্রপাঠক
অনুবাদঃ আমরা বজ্রনখকে জানব। তাই আমরা তীক্ষ্ণদন্তের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে নরসিংহ আমাদেরকে প্রেরিত করুন।
কৃষ্ণ যজুর্বেদের মহানারায়ণ উপনিষদেও এই নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্রটি পাওয়া যায়। এ মন্ত্রটিতে নৃসিংহদেবকে ‘বজ্রনখা’ এবং ‘তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর নখ বজ্রের মত কঠোর ভয়ংকর এবং দাঁত তীক্ষ্ণ ধারালো।
বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰায় ধীমহি।
তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ ।।
~ মহানারায়ণ উপনিষদ ৩/১৭ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ)
অনুবাদঃ আমরা বজ্রনখকে জানব। তাই আমরা তীক্ষ্ণদন্তের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে নরসিংহ আমাদেরকে প্রেরিত করুন।
ঋগ্বেদ সংহিতায় ১ম মণ্ডলের ১৫৪ সূক্তে ভগবান বিষ্ণুর এই উগ্র অবতারের কথা বর্নিত আছে –
प्र तद्विष्णुः स्तवते वीर्येण मृगो न भीमः कुचरो गिरिष्ठाः । यस्योरुषु त्रिषु विक्रमणेष्वधिक्षियन्ति भुवनानि विश्वा ॥
प्र विष्णवे शूषमेतु मन्म गिरिक्षित उरुगायाय वृष्णे ।
य इदं दीर्घं प्रयतं सधस्थमेको विममे त्रिभिरित्पदेभिः ॥
প্র তদ্ বিষ্ণু স্তবতে বীর্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ । যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষধি ক্ষিয়ন্তি ভুবনানি বিশ্বা ॥প্র বিষ্ণবে শূষমেতু মন্ম গিরিক্ষিত উরুগায়ায় বৃষ্ণে। য ইদং দীর্ঘং প্রযতং সধস্থমেকো বিমমে ত্রিভিরিৎ পদেভিঃ॥
~ ঋগ্বেদ সংহিতা: ১/১৫৪/২-৩
অনুবাদঃ সেই বিষ্ণু বীরত্ব বীর্যসূচক কর্মহেতু জগতে স্তুত হয়ে থাকেন। বিষ্ণুর তিন পদক্ষেপে সমস্ত ভুবনে অবস্থান করে আছেন; এতেই সকল প্রাণী জীবিত থাকে।আবার তিনি ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী দুর্গম স্থানে বিচরণশীল। অর্থাৎ বিষ্ণুর শান্ত এবং উগ্র উভয়রূপ বিরাজমান। লোকপ্রশংসিত মহাবল বিষ্ণু এ স্তোত্রসমূহ গ্রহণ করুক। তিনি ফলবর্ষণকারী বৃষভ, তিনি পর্বতবাসী, তিনি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়ে ভ্রমণকারী। সেই বিষ্ণু তিনটিমাত্র পদক্ষেপ দ্বারা এই দীর্ঘ, অতিবিস্তৃত সকলের বাসস্থান পরিমাপ করেছেন।
পরিশেষে শ্রীশঙ্করাচার্য সঙ্কটনাশন নৃসিংহদেবকে নিয়ে ‘শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম্’ রচনা করেছিলেন। সেখানে শ্রীশঙ্করাচার্য নৃসিংহদেবের কৃপাময় শ্রীহস্ত তাঁর মাথায় রাখতে বলে; নৃসিংহদেবের করকমলে আশ্রয় চেয়েছেন।
লক্ষ্মীপতে কমলনাভ সুরেশ বিষ্ণো
বৈকুণ্ঠ কৃষ্ণ মধুসূদন পুষ্করাক্ষ।
ব্রহ্মণ্য কেশব জনার্দন বাসুদেব
দেবেশ দেহি কৃপণস্য করাবলম্বম।।
~ শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম্ ১২
অনুবাদঃ হে লক্ষ্মীপতি,হে কমলনাভ,হে সুরেশ, হে বিষ্ণু,হে বৈকুণ্ঠ,হে কৃষ্ণ,হে মধুসূদন,হে পদ্মলোচন,
হে ব্রহ্মণ্য, হে কেশব, হে জনার্দন, হে বাসুদেব, হে দেবেশ,তুমি দীন-পতিত আমার মস্তকে কৃপাময় তোমার শ্রীহস্ত স্থাপন করে তোমার করকমলে আমায় আশ্রয় দাও।
©️ স্বধর্মম্ ™️