কিভাবে পুরীধামে জগন্নাথ প্রকটিত হয়েছিল ?( ৬ষ্ঠ পর্ব)

20250624_170243

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের প্রকাশঃ

৫ম পর্বের পর-

স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,ঊনবিংশ অধ্যায়ের ১-৩৭ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ

জৈমিনি ঋষি বললেন, এরপর সেই ভূপতি প্রতিমা নির্মাণের গৃহদ্বার আবদ্ধ করে আকাশগামিনী বাগদেবী যেরূপ কর্তব্য উপদেশ দিয়েছিলেন সেইরূপ আচরণ করতে লাগলেন।ক্রমে ক্রমে পঞ্চদশ দিবস সমাগত হলে আমি যেই রূপ পূর্বে বলেছিলাম সেই রূপে জগন্নাথদেব স্বয়ংই স্বীয় মূর্তিতে অধিষ্ঠিত হলেন। আমি যেই প্রকারে তোমাদেরকে বর্ণনা করেছি এক্ষণে সে প্রকারে সেই জনার্দন (জগন্নাথ),বলরাম, সুভদ্রা ও চক্রের সাথে দিব্য সিংহাসনে আবির্ভূত হলেন।

ভগবৎ রুপ এই চার প্রকারে সম্পাদিত হলে লোক দিকের উপকারার্থে সেই আকাশ বাণী পুনরায় ধ্বনিত হল, হে নরপতি, এই প্রতিমাগুলি পট্র বস্ত্রের (পাঠ বস্ত্রের) দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবৃত করে চিত্রকর্মের দ্বারা স্ব স্ব বর্ণে রঞ্জিত কর। বিষ্ণুকে(জগন্নাথ) নীল মেঘবর্ণ শ্যামল, বলদেবকে শঙ্কপ্রতীম ধবল, সুদর্শন চক্রকে রক্ত ও সুভদ্রা দেবীকে কুমকুম সম অরুণ বর্ণে বিবিধ অলংকারী দ্বারা পরিশোভিত কর।

নিবৃত্তে ভগবদ্রুপে চতুর্দ্ধা দিব্য রুপিনী।

লোকানামুপকারায় পুনরাহান্তরীক্ষগা।।১৯।।

পটেরাচ্ছাদ্য সুদৃঢ়ং নৃপতে প্রতিমান্ত্বিমাঃ।

স্বং স্বং বণং প্রাপয়াশু বর্ণকৈশ্চিত্র কম্মর্ণা।।২০।।
নীলাভ্রশ্যামলং বিষ্ণুং শঙ্খেন্দুধ্বলং বলম।
রক্তং সুদর্শনং চক্রং সুভ্রদ্রাং কুঙ্কুমারুণাম।
নানালঙ্কাররুচিয়াং নানাভঙ্গিবিভাগশ।।২১।।

এরপর রাজা আকাশবাণী শ্রবণ করে মূর্তি চতুষ্টয়ের বেষ্টন উন্মোচন করেন।তখন সকলেই দেখলেন যে রত্ন সিংহাসনের উপরিভাগে বলরাম, জগন্নাথ, সুভদ্রা দেবী ও বাসুদেবের চক্র স্থিত আছেন। আকাশবাণীতে যেরূপ উপদেশ দিয়েছিলেন সেরুপ আকৃতি, যা অতি মনোহারিণী হয়েছে।

তয়োপদিষ্টমাকর্ন্য প্রহৃষ্টেনান্তরাত্মনা।।৩৫।।
বেষ্টনং মোচয়ামাস মহাবেদ্যাং নৃপোত্তমঃ।
দদৃশুন্তে তদা সর্ব্বে রত্নসিংহাসনস্থিতম।।৩৬।।
রামং কৃষ্ণং সুভাদ্রাঞ্চ বাসুদেবং সুদশনর্ম।
যথাপদিষ্ট লেপাদিসংস্কারে রুচিরাকৃতিম।।৩৭।।

এরপর বিংশ অধ্যায়ঃ ১-২ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী জৈমিনি বললেনঃ

এ পৃথিবীর মহান জন নারদ কর্তৃক উপদেশ প্রাপ্ত হয়ে স্তুতিবাক্যের দ্বারা ইন্দ্রদ্যুম্ন করুণাময় জগন্নাথের স্তব করতে লাগলেন।ইন্দ্রদ্যুম্ন বললেন-

ইন্দ্রদ্যুম্ন উবাচ।
ত্বদঙ্ঘ্রি পাথোজযুগং মুরারে
নোপাাসিতং জন্মসু পূর্ব্বজেষু।
তৎকম্মর্ণা দারুণ দারুণপাকভীতং
দীনং পবিত্রাহি কৃপাম্বুধে মাম।।২।।

অনুবাদঃ হে মুরারি , আমি যে পূর্ব-পূর্ব আপনার ঐই চরণ যুগলের উপাসনা করি নি, এই ক্ষণে সেই কর্মফলে আমি দীন ও নিদারুণ দুর্বিপাকে ভীত হয়েছি। অতএব হে কৃপাম্বুধি, আমাকে পরিত্রাণ কর।

এরপর একবিংশ অধ্যায়, ১-৮ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ

জৈমিনি ঋষি বললেন,ইন্দ্রদ্যুম্ন নরপতি এই প্রকার স্তব করছেন, এমন সময় ঋগ্বেদ পরায়ন সাক্ষাৎ ব্রহ্মসাগর নারদ বলতে লাগলেন, আহা!আপনার এই বিপুল ভাগ্যরাশি অতি আশ্চর্যজনক, যেহেতু ভগবান পৃথিবীতে দারুমূর্তি পরিগ্রহপূর্বক আবির্ভূত হয়েছেন।তাই বেদে (শ্রুতি) বলা হয়েছে-

য এষ প্লবতে দারুঃ সিন্ধুপারে অপৌরুষঃ।
তমুপাস্য দুরারাধ্য মুক্তিং যাতি সুদুর্লভাম।।৩।।

অনুবাদঃ যে অপৌরুষেয় দারুটি সমুদ্রপারে ভাসমান হচ্ছে, দুরারাধ্য তাকে উপাসনা করলে অত্যন্ত দুর্লভ মোক্ষপ্রদ প্রাপ্ত হওয়া যায়। 

এরপর নারদ ঋষি আরো বলতে লাগলেন, এই ভগবান (দারুব্রহ্ম জগন্নাথ) বেদান্ত বাক্যে অজ্ঞান নন(অথাৎ জ্ঞাত) এবং বিষ্ণুর কার্য সকল বেদ বহির্ভূত হয় না। প্রভু যখন সৃষ্টি করেন অথবা স্বয়ং সৃষ্টি হন, তখনও তিনি বেদ প্রমাণের বশীভূত থাকেন। অতএব যিনি বেদের বিপরীত কার্যে প্রবর্তিত হন,কোন ব্যক্তি তাঁর প্রমানে বিশ্বাস করেন?

তস্মাৎ শ্রুতিপ্রসিদ্ধোহয়মবতারোহত্র ভূপতে।
বেদান্তবেদ্যং পুরুষং গীতং তং সামগীতিষু।।৬।।
প্রতিমাং ন তু জানীহি নিঃশ্রেয়সকরীং নৃনাম।
দর্শনাদেব নশ্যস্তীং সুদূরং তম উত্তমম।।৭।।
সন্ত্যেব শ্রুতয়ঃ পূর্বমেতদচ্চাপ্রবালিকাঃ।
এতদর্চ্চ প্রশস্তা বৈ যদর্থে বিনিযোজিতাঃ।।৮।।

অনুবাদঃ অতএব হে ভূপতি, বেদে (শ্রুতি)এই জগন্নাথ অবতার প্রসিদ্ধ আছে। সামবেদে (সামগীতি) তিনি বেদবেদান্তবেদ্য পুরুষ বলে গীত হয়েছেন। তাঁকে সামান্য প্রতিমা বলে জানিও না, যেহেতু ইনি মনুষ্যদিগের মোক্ষ প্রদান করেন,যাকে দর্শন মাত্রই তমগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এই জগন্নাথের প্রতিমূর্তি বিজ্ঞাপক শ্রুতি (বেদমন্ত্র) নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে অবস্থিত ছিল, কিন্তু সেই প্রতিমাগুলি আমাদের প্রত্যক্ষভূত হওয়াতে এই আমাদের নিমিত্ত নিয়োজিত হল।

  জয় জগন্নাথ।হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments