কিভাবে পুরীধামে জগন্নাথদেব প্রকটিত হয়েছিল?( ৪র্থ পর্ব)

FB_IMG_1750865787602

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবঃ

৩য় পর্বের পর-

স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, দ্বাদশ অধ্যায়ের ১-১২৭নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ

জৈমিনি বলতে লাগলেন, ইন্দ্রদ্যুম্ন ব্রহ্মনন্দন নারদের মুখ থেকে এরুপ বাক্য শ্রবণ করে বলতে লাগলেন,আহা! আমার কি সৌভাগ্য,বহুজন্মে কতই না জানি পূণ্য করেছি,সর্বলোকপিতামহ ব্রহ্মা আজ আমার কার্যে সাহায্য করছেন।তিনি তার নিজ পুত্রকে আমার সহায় করে পাঠিয়েছেন।দ্বিজগণ, রাজা এইরুপ চিন্তা করে মুনিকে হস্তে ধারনপূর্বক অন্তঃপুরে প্রবেশ করেন।নৃপতি যথাবিধানে তার অর্চনা করে রাত্রি যাপন করলেন।প্রভাত হলে রাজা নারদ মুনিকে সঙ্গে নিয়ে নীলগিরি দর্শনে গমন করেন।পথে চলতে চলতে নারদ মুনি পুরুষোত্তমক্ষেত্র নীলগিরিতে শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞায় শিবের তপস্যা করার বিষয়ে এক পুরাতন ইতিহাস শুনান ( পূর্ব কল্পের দ্বাপর যুগের)।দ্বিতীয় দিবসে রাজা কপোতেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে উপনীত হন।

ত্রয়োদশ অধ্যায়, ১-৩১ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ

মুনিগণ কপোতস্থলী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জৈমিনি এক পুরাতন ইতিহাস বর্ণনা করেন।

চতুর্দশ অধ্যায়, ১-৪৯ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ

মুনিগণ জিজ্ঞাসা করলেন,হে মহামুনি জৈমিনি, ইন্দ্রদ্যুম্ন ও নারদ ঋষি রথে আরোহন করে কোথায় গমন করলেন? উত্তরে জৈমিনি বললেন,তারা সেই পুরোহিত বিদ্যাপতির সাথে ক্ষেত্রধাম সীমায় নীলকন্ঠের নিকটবর্তীস্থলে উপস্থিত হলেন।নারদ মুনি বললেন,হে ভূপ, আপনি বিষন্ন হবেন না,যার নিমিত্তে আপনার এই যাত্রা করা হয়েছে, তিনি অন্তর্ধান প্রাপ্ত হয়েছেন।এই বিদ্যাপতি বিপ্র যেদিন তাঁকে দর্শন করে়ছিলেন, তারপর দিন সন্ধ্যার সময়ে তিনি স্বর্ন বালুকাদ্বারা আবৃত হয়ে পাতাল লোকে গমন করেন।এখন আর মর্ত্যলোকে তার দর্শন দুর্লভ।

জৈমিনি বললেন,হে দ্বিজগণ, নরপতি সেই বজ্রাঘাত সদৃশ ঘোরতোর বাক্য শ্রবণ করে ভূমি তলে পতিত হলেন।এরপর রাজাকে এরুপ দর্শন করে পুরোহিতগণ ও সকল আত্মীয় বন্ধুগণ হাহাকার করতে লাগলেন এবং সুবসসিত জল পুনঃ পুনঃ মুখে ছিটিয়ে দিলেন।কিছুসময় পর রাজার চেতনা ফিরে এল।এরপর রাজা নারদমুনির চরনে নিপতিত হয়ে বিলাপ করতে করতে বলতে লাগলেন, হে মুনে, আমি কি জন্মান্তরে ঘোরতর পাপ করেছিলাম,যার ফলে আমাকে এরুপ দুঃখ ভোগ করতে হচ্ছে? আহা! বিদ্যাপতির কি ভাগ্য, তিনি নীলমাধবকে দর্শন করলেন।হে মুনিবর, আপনি এসমস্ত কিছু জেনেও যাত্রার সময় কেন আমাকে এসব জানান নি?আমি যদি হরিদর্শন থেকে বঞ্চিত হই,তাহলে আমি আর প্রাণ ধারন করব না।আমি যখন তা প্রতিজ্ঞা করলাম তখন প্রজা সকলের জীবনের সম্ভাবনা কি? হে মুনে, আপনি সর্বদা শুভাশুভ জ্ঞান প্রদান করেন,তাই অনুগ্রহ করে আমার এই পুত্রকে নিয়ে রাজ্য অভিষিক্ত করুন।এই সন্তানটি রাজ্য প্রতিপালন করলে আর প্রজারা শোকগ্রস্থ হবে না।প্রজাসকল আমার অনুমতিক্রমে রাজ্যে গমন করুন।আমি নীলমাধবকে চিন্তা করতে করতে এই ক্ষেত্রে আয়ু শেষ করব।

এই কথা বলতে বলতে ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা নারদ মুনির পায়ে পড়ে বিলাপ করলে নারদমুনি রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে লাগলেন,হে রাজন,চর্মচক্ষু দ্বারা শরীরধারী গদাধরকে ( বিষ্ণু) দর্শন করা মানুষের শতজন্মাজ্জিত শ্রেয় বলে জানবে।এই হরির লীলা কেউ বুঝতে সমর্থ নয়।তুমি ভাগ্যধরগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।হে ইন্দ্রদ্যুম্ন, সে হরিমূর্তির চাররুপ।ঐই সকল মুর্তিরই তোমার প্রতি অনুগ্রহবুদ্ধি আছে,ব্রহ্মা আমাকে এ কথা বলেন।তিনি বলেন,তুমি শীঘ্রই ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজার নিকট গমন কর,তিনি নীলমাধবকে দর্শনাভিলাষী হয়ে নীলপর্বতে গমন করতে উদযোগী হয়েছেন।কিন্তু এই নীলমাধব যমের প্রার্থনাক্রমে যে অন্তর্হিত হয়েছেন,তাতে তিনি যেন শোক না করেন।সুতারাং এই বার্তা রাজাকে বলবে,তাকে প্রসন্ন করতে আমি মাধবকে ( জগন্নাথ)শ্বেতদ্বীপ হতে আনায়ন করব।সেই ইন্দ্রদ্যু্ম্ন এখন পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ দ্বারা বিষ্ণুকে পূজা করে অবস্থান করুন।তার ফলে সেই দারুময় মুর্তি বিষ্ণুকে ঐ চর্মচক্ষু দ্বারাই দেখতে পাবেন।এবং বিষ্ণুর সেই অবতার এই ইন্দ্রদ্যুম্ন দ্বারাই সর্বজন বিদিত হবে এবং স্বয়ং আমিই সেই দারুমুর্তিচতুষ্ঠয়ের প্রতিষ্ঠা করব।পূর্বকালে ভগবান মনিময়মুর্তিধারী হরি চারিমুর্তিতে বিরাজিত ছিলেন,ভবিষ্যতে ভগবান দিব্যদারুময় শরীরে চতুর্মুর্তিতে অবতীর্ণ হবেন।অতএব হে রাজন, তুমি দুঃখিত হইও না।তোমার ইচ্ছা অবশ্যই সফল হবে,তাতে সন্দেহ নাই।

জৈমিনি বললেন,হে দ্বিজগন নারদ ঋষি পুনরায় রাজার বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য পুনরায় বললেন,হে রাজন,শঙ্খাকৃতি ক্ষেত্রধামের দুর্গম অগ্রভাগে সেই দুষ্প্রাপ্য নীলকন্ঠ শিব যেস্থানে অবস্থান করছেন,আমরা অশ্বমেধ যজ্ঞের সেই মনোরম সমতল স্থলীতে গমন করব।এবং সেস্থলে অশ্বমেধ যজ্ঞের জন্য সহস্র বর্ষ পর্যন্ত নরসিংহ মুর্তি নির্মানপূর্বক তার দর্শন দ্বারা জন্মকে কৃতার্থ করব।ভগবান পুরুষোত্তমের মুর্তি অদর্শন দ্বারা তোমার যে যাতনা আছে, তা এই নিত্য বন্দনীয় ও পূজনীয় নরসিংহ মুর্তি ভজনা করে ত্যাগ কর।প্রথমে নৃসিংহ প্রতিষ্ঠা করলে সকল বিঘ্ন বিনষ্ট হয়ে ফলবৃদ্ধি হতে থাকবে।অতএব এ বিষয়ে বিলম্ব করা উচিত নয়,তা পিতামহ বলে গিয়েছেন।এখন এস,আমরা সেই অশ্বমেধ যজ্ঞ যথাশাস্ত্র মতে সম্পাদন করি।চলবে…

জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম

©️ স্বধর্মম্

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments